কোরআনে মুত্তাকি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
মুত্তাকি বলা হয় যাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভ’য় আছে এবং যারা আপন রবের ভ’য়ে গু’নাহ থেকে বেঁ’চে থাকে। তবে মুত্তাকি মানে এমন নয় যে কখনো কোনো গু’নাহ হয় না। স্খ’ন হতে পারে, ভু’ল হতে পারে, কিন্তু মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য হল, গু’নাহ হয়ে গেলে মনে অ’নুতাপ জাগে, আল্লাহর ভ’য় জাগে এবং এই উপলব্ধি জাগে যে, আমি আমার পথ থেকে বি’চ্যুত হয়ে পড়েছি। তখন সে
ব্যা’কুল হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। তওবা করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা কোনো অ’শ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জু’লুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পা’পের জন্য ক্ষ’মা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে পা’প ক্ষ’মা করবে? আর তারা যা করে ফেলে জেনে বুঝে তাতে অ’টল থাকে না।’ -(সূরা আলে ইমরান, আয়াত,
১৩৫) বান্দার গু’নাহ, তওবা ও বারবার ক্ষ’মা প্রার্থনার বিষয়ে এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনও এক ব্যক্তি গু’নাহ করার পর বলল, হে আল্লাহ! আমি গু’নাহ করেছি সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষ’মা করে দাও। তখন আল্লাহ্ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা গু’নাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গু’নাহ মাফ করবে ও
তাকে পা’কড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষ’মা করে দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গু’নাহ করে আবারও বলল, হে রব! আমি গু’নাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষ’মা করে দাও। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা গু’নাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গু’নাহ মাফ করবে ও তাকে পা’কড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষ’মা করে
দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গু’নাহ করে আবারও বলল, হে রব! আমি গু’নাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষ’মা করে দাও। তখন আল্লাহ্ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা গু’নাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গু’নাহ মাফ করবে ও তাকে পা’কড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষ’মা করে দিলাম, সে যাই করুক না কেন। -(বুখারী, ৭৫০৭, মুসলিম,
২৭৫৮) কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় মুত্তাকিদের গুণাবলির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কয়েকটি তুলে ধরা হলো এখানে- অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা : মুত্তাকিদের প্রধান গুণ হলো তারা গায়েবি তথা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদের যে জীবিকা দান
করেছি, তা থেকে ব্যয় করে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩) ক্ষ’মা করা : কারো ভু’ল কিংবা অ’পরা’ধের পর তাকে ক্ষ’মা প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। কোরআনে ক্ষ’মা করাকে মু’ত্তাকিদের গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা যদি ক্ষ’মা করো, তবে তা হবে তাকওয়ার নিকটবর্তী। ’(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৭) গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা :
মুত্তাকিদের অন্যতম গুণ হলো, তারা গুনাহ থেকে নিজেদের দূরে রাখে। যদি কখনো গুনায় জ’ড়িয়ে পড়ে, তারা দ্রুত তাওবা করে নিজেদের সং’শোধন করে নেয়। আল্লাহ বলেন, ‘যাদের মনে ভ’য় রয়েছে, তাদের ওপর শ’য়তানের আগমন ঘ’টার সঙ্গে সঙ্গেই তারা স’তর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশ’ক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০১) সত্যান্বেষী :
মুত্তাকিদের সত্যান্বেষী হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই মুত্তাকি। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩৩) দান করা : মুত্তাকিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা সুখে-দুঃ’খে দান-সদকা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(আল্লাহভী’রু তারাই) যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রা’গকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষ’মা প্রদর্শন করে, আর
আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪) রা’গ নি’য়ন্ত্রণ করা : রা’গ মানুষের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রা’গ অ’ন্যায় কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই ইসলাম মানুষকে রা’গ নি’য়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সচ্ছলতায় ও অ’ভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রা’গকে সংবরণ করে আর মানুষের
প্রতি ক্ষ’মা প্রদর্শন করে, আর আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪) আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করা : মুত্তাকিরা আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান প্রদর্শন করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভী’তির কারণে। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২) ন্যায়পরায়ণ
হওয়া : ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা মুত্তাকিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শ’ত্রুতা যেন তোমাদের ন্যা’য়বি’চার প’রিত্যা’গে প্ররোচিত না করে। তোমরা সু’বিচার কোরো, এটাই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভ’য় কোরো। তোমরা যা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। ’ (সুরা : মায়েদা,
আয়াত : ৮) রাত জেগে ইবাদত করা : পবিত্র কোরআনে রাতের শেষাংশে ইবাদত করাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা অত্যন্ত ধৈ’র্যশীল, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষ’মা প্রার্থনাকারী। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫)