নাসির পবিত্র কোরআনে হাফেজ, এখন দেশসেরা মার্শাল আর্টেও!
তিনি মাদরাসার ছাত্র। পবিত্র কোরআনের হাফেজ। হেফজ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন মাওলানা পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হাফেজ মোহাম্মদ আলীমুজ্জামান নাসির আগ্রহী ছিলেন
শরীরচর্চায়। মার্শাল আর্ট ভালো লাগত তাঁর। মাদরাসার ছাত্র হয়ে মার্শাল আর্ট পছন্দ করার কথা বলতে পারছিলেন না কাউকেই। সাহস করে একদিন বড় ভাইকে কথাটা জানালে সমর্থন দেন তিনি। বড় ভাইয়ের চেষ্টায় ২০১৭ সালের দিকে ঢাকায় মেজবাহ
আর্ট একাডেমিতে ভর্তি হন নাসির। সেখানে এস এম মেজবাহ উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। নাসিরের প্রতিভা দেখে মেজবাহ উদ্দীন তাঁকে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেন। সে ম্যাচটি হারেন নাসির। এরপর তাঁকে হারাতে
পেরেছেন খুব কম খেলোয়াড়।নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে এখন তিনি মার্শাল আর্টে দেশসেরা। গত ৫ থেকে ৮ আগস্ট চার দিনব্যাপী ঢাকার পুরানা পল্টনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জিমনেসিয়ামে বাংলাদেশ মার্শাল আর্ট ফেডারেশন শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ
কামাল স্মৃতি জাতীয় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। এতে গোপালগঞ্জ স্পোর্টি ক্লাব, ঢাকা ক্রীড়া সংস্থা, নরসিংদী ক্রীড়া সংস্থা, বরিশাল ক্রীড়া সংস্থা, নোয়াখালী ক্রীড়া সংস্থা, গাজীপুর ক্রীড়া সংস্থা ও রংপুর ক্রীড়া সংস্থার ৬০ জন প্রতিযোগী
অংশ নেন। সবাইকে পেছনে ফেলে দেশসেরা হন নাসির। গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে চারটি সোনা, পাঁচটি রুপা ও একটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন তিনি। এর আগে ২০২১ সালের কিশোরগঞ্জের নেহাল পার্কে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় কুংফু
প্রতিযোগিতায় দেশের ১৮টি জেলার ৬৫ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদক পান নাসির। এরপর গত মার্চে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় তাইচি কুংফু
প্রতিযোগিতায় ১৮টি জেলার ২০০ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম হন তিনি। নিজের সাফল্যের মূল কৃতিত্ব পরিবারকেই দিলেন নাসির, ‘এই কৃতিত্বের পেছনে আমার বাবার অবদান অনেক। বাবা সব সময় আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
আমার বড় ভাইও আমাকে নানা ধরনের সহযোগিতা করেছেন। মেজবাহ স্যার নিজের ছেলের মতো আমাকে গড়ে তুলেছেন। তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। ’ কালের কণ্ঠকে নাসির আরো বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের জন্য মার্শাল আর্ট শেখা খুবই জরুরি।
শরীরকে সুস্থ রাখা, মনোবল বাড়ানো, আত্মরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ জন্যই আমি মার্শাল আর্ট পছন্দ করতাম। কিন্তু জাতীয় প্রতিযোগিতায় এত বেশি পদক পাব, কখনো ভাবিনি। ’ নাসিরের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত কাশিয়ানী
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী খোকন, ‘ছেলেটা আমাদের খায়েরহাট গ্রাম আর পুরো গোপালগঞ্জ জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। এ জন্য আমি এবং আমার ইউনিয়নবাসী আনন্দিত ও গর্বিত। আমার বিশ্বাস, আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে
নাসির।’