বৈশাখ মাসের চাষাবাদে কৃষকদের করণীয়
বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। এ মাসজুড়ে চলতে থাকে ঐতিহ্যবাহী মেলা, উৎসবসহ বিভিন্ন আয়োজন। নতুন আবাহন আর প্রত্যাশার মাঝে কৃষকরা ফিরে তাকান ফসলের মাঠে। কারণ এ মাস থেকেই তারা শুরু করেন পুরো বছরের কৃষি কাজের পরিকল্পনা। তাই জেনে নেওয়া যাক বৈশাখে কৃষির করণীয় বিষয়গুলো। মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য মে পর্যন্ত সময় বৈশাখ মাসের ব্যাপ্তি। বোরো ধান যারা এই মৌসুমে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন তাদের চারার আনুমানিক বয়স ৫০ থেকে ৫৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের শেষ কিস্তি সম্পন্ন করতে হবে। তবে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে এর প্রয়োজন নেই। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা, সেচ দেওয়া, বালাই দমন এসব কাজ সবসময়ের মতোই সঠিকভাবে করতে হবে। ধানের থোড় আসা শুরু হলে জমিতে পানির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়াতে হবে এবং দানা শক্ত হলে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে।বৈশাখে সাধারণত বোরো ধানে মাজরা পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং, গান্ধি পোকা, লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা, ছাতরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তাই পোকা দমনের জন্য নিয়মিত ক্ষেত দেখে রাখতে হবে এবং পোকার আক্রমণে যথোপযুক্তবালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকার আক্রমণ রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আলোর ফাঁদ পেতে, পোকা ধরার জাল ব্যবহার করে, ক্ষতিকর পোকার ডিমের গাদা নষ্ট করে, উপকারী পোকা সংরক্ষণ করে, ক্ষেতে ডাল-পালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাইমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উপায়ে পোকার আক্রমণ না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। এসময় ধান ক্ষেতে উফরা, বাদামি দাগ রোগ, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া ও টুংরো রোগসহ অন্যান্য রোগ হতে পারে। জমিতে উফরা রোগ দেখা দিলে যে কোনো কৃমিনাশক যেমন ফুরাডান ৫জি বা কিউরেটার ৫জি প্রয়োগ করতে হবে। ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ইউরিয়া সার দেওয়া থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে হেক্টরপ্রতি ৪০০ গ্রাম ট্রুপার বা জিল বা নেটিভ ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে পাতাপোড়া রোগ হলে অতিরিক্ত ৫ কেজি-বিঘা হারে পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং জমির পানি শুকিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর আবার সেচ দিতে হবে। আর টুংরো রোগ দমনের জন্য এর বাহক পোকা সবুজ পাতা ফড়িং দমন করতে হবে।