যে কাজকে সদকার চেয়ে উত্তম বলেছেন নবীজি
ইসলাম সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে মুমিনদের মাঝে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে। যখনই দুজন মুমিন ঈমানের দাবিতে একত্রিত হবে, তাদের মাঝে এই ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সূরা হুজুরাত, আয়াত, ১০) অর্থাৎ দুনিয়ার অন্য কোনও আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে
এমন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী সবাই একে অন্যের বন্ধু।’-(সূরা তাওবা, আয়াত, ৭১)আরও বলা হয়েছে, ‘(তারাই বিবেকবান) আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভ’য় করে, আর ভ’য় করে ক’ঠোর হিসাবকে।’ -(সুরা : রাদ, আয়াত :
২১) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিনদের দৃষ্টান্ত এক দেহের ন্যায়, যার একটি অঙ্গ অ’সুস্থ হলে গোটা দেহ জ্ব’র ও অ’নিদ্রায় আ’ক্রান্ত হয়।’-(সহিহ বুখারি-৬০১১) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিন মুমিনের জন্য আয়না স্বরূপ। মুমিন মুমিনের ভাই। সে তার জমি সংরক্ষণ করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে র’ক্ষা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪৯১৮) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জু’লুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনও ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকর্ম আর নাই। -(মুসনাদে আহমাদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬) অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বান্দার
সহযোগিতায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। -(মুসলিম: ২৬৯৯) মুসলমানদের একে অপরের সম্পর্কের গভীরতার বিষয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য দেওয়ালস্বরূপ; যার এক ইট অপর ইটকে শ”ক্ত করে ধরে থাকে।’ (বুখারী) তবে চলার পথে অনেক সময় আমাদের পরস্পরের মাঝে মনোমালিন্যতা
তৈরি হয়। তবে এই স’ম্পর্ক ঠিক করে দেওয়ার বিষয়ে হাদিসে পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামকে প্রশ্ন করেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নামাজ, রোজা আর সদকার চেয়েও উত্তম কোনো কিছুর কথা বলব? তারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক করে দেয়া। আর
পারস্পরিক সম্পর্ক ন’ষ্ট করে দেয়া তো (দ্বীনকে) মুণ্ডিয়ে দেয়া।’ -(সুনানে আবু দাউদ-৪৯২১) অনেক সময় মনোমালিন্যতার জেরে কথা বলাও বন্ধ করেন কেউ কেউ। এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন আল্লাহর রাসুল। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরস্পর স’ম্পর্কছেদ করো না, একে অন্যের বি’রুদ্ধে
শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বি’রুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিং’সা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখা বৈ’ধ নয়।’ -(বুখারি : ৬০৫৬; মুসলিম : ২৫৫৯) রাসুল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই
কখনো ম’নোমা’লিন্যতা হয়ে গেলে তা ভুলে গিয়ে আপন মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে স’ম্পর্ক ঠিক করে নেওয়া উচিত। হাদিস শরিফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যতক্ষণ ঈ’মান আনবে না, ততক্ষণ বেহেশতে প্রবেশ করতে
পারবে না। আর যতক্ষণ তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে না, ততক্ষণ তোমরা মুমিনও হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে একটি কাজের কথা বলে দেবো, যা করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমাদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও।’ -(সহিহ মুসলিম-৫৪)