১৮ বছর পর জানা গেল, একজনের ব’দলে চাকরি করছেন আরেকজন
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম ওরফে এশু। ২০০৩ সালে কা’রার’ক্ষী পদে নিয়োগের লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে পু’লিশি ত’দন্তও হয়। এর পর থেকে চাকরিতে যোগ দিতে নিয়োগপত্রের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিয়োগপত্র আসেনি। সরকারি চাকরির আশা
ছেড়ে দিয়ে কাপড়ের ব্যবসায় লেগে যান জহিরুল। এদিকে গত বছরের (২০২১) ডিসেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কুলাউড়া পৌ’রস’ভার স্থা’নীয় ও’য়ার্ড কা’উন্সিলরের কাছে জহিরুলের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে জ’হিরু’ল ইসলাম কা’রার’ক্ষী (ক্রমিক নম্বর-২২০১৪) পদে কর্মরত বলে উল্লেখ করা হয়। কা’উন্সি’লরের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে জহিরুল বি’স্মিত হন। পরে এ বিষয়ে কুলাউড়া থা’নায় তিনি সা’ধারণ ডা’য়েরি (জি’ডি) করেন। জি’ডিতে তাঁর স্থলে অন্য
কেউ চাকরি করছেন বলে উল্লেখ করেন জহিরুল। একই সঙ্গে বিষয়টি কারা ক’র্তৃপ’ক্ষকে লিখিতভাবে জানান তিনি। এরপর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ ত’দন্ত করে জানতে পারে, একই ক্রমিক নম্বরে জহিরুল ইসলাম নামের কুমিল্লার আরেক ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কা’রাগা’রে কা’রার’ক্ষী পদে চাকরি করছেন। ওই ব্যক্তির বি’রু’দ্ধে প্রকৃত জহিরুলের নাম-ঠিকানা জা’লিয়া’তি করার
সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত ক’মিটির প্রতিবেদনের আলোকে ওই ব্যক্তির বি’রুদ্ধে বি’ভাগীয় মা’মলাও হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত জহিরুল ইসলাম তাঁর চাকরি ফিরে পেতে ঊর্ধ্বতন কারা ক’র্তৃপ’ক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। ত’দন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার জহিরুলের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয়। সিলেটের কারা
উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। তদন্তে দেখা যায়, চাকরি বহিতে কা’রার’ক্ষীর নাম জহিরুল ইসলাম এশু। অথচ কর্মরত কা’রার’ক্ষীর জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম শুধু জহিরুল ইসলাম। চাকরি বহিতে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা উল্লেখ করা। আর জাতীয়
পরিচয়পত্রে ঠিকানা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর উল্লেখ করা। অন্যদিকে জহিরুল ইসলাম এশুর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চাকরি বহির ঠিকানার মিল পাওয়া যায়। জহিরুল ইসলাম এশুর বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মা সেলিনা বে’গম। আর কারারক্ষী পদে চাকরিরত জহিরুল ইসলামের বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মা আয়েশা খাতুন। তদন্তের পর চাকরিরত কা’রার’ক্ষী জহিরুল ইসলামকে ‘ভু’য়া’ উল্লেখ করে তাঁর বি’রুদ্ধে বি’ভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊ’র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা
হয়। এরপর তাঁর বি’রুদ্ধে বি’ভাগীয় মা’মলা করা হয়। জানতে চাইলে ত’দন্ত কমিটির প্রধান সিলেটের কারা মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাকরি বহিতে দেওয়া স্থায়ী ঠিকানায় জহিরুল ইসলাম তাঁর বাড়ি কুলাউড়ায় উল্লেখ করলেও ত’দন্তকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন কেউ-ই তাঁকে চিনতে পারেননি। তাঁর বি’রুদ্ধে করা বি’ভাগীয়
মা’মলারও ত’ন্ত চলছে। কীভাবে তিনি চাকরিতে যোগদান করলেন, সেটাও ত’দন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই মা’মলার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এ ঘ’টনায় কারা কর্তৃপক্ষের কারও জ’ড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে কি না, জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ত’দন্তের আওতায় না থাকায় এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।ভু’ক্তভো’গী
জহিরুল ইসলাম এশু বলেন, ‘কাউন্সিলরের কাছে নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের চিঠি না এলে প্রকৃত ঘ’টনা জানা সম্ভব হতো না। আমি তো আশাই ছেড়ে দিছিলাম। ১৮ বছর পর জানলাম, আমার জায়গায় আরেকজন চাকরি করছে। অ’বাক ঘ’টনা! আমি চাকরি ফিরে পেতে চাই। এ ঘ’টনায় জ’ড়িত ব্যক্তিদের ক’ঠিন শা’স্তি হোক।’ কুলাউড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কা’উন্সিলর জহিরুল
ইসলাম খান বলেন, জহিরুল ইসলাম এশুকে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে চেনেন। তবে জহিরুল ইসলাম নামের কাউকে তিনি ও স্থানীয় বা’সিন্দারা চেনেন না। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চে’ষ্টা করলেও কা’রার’ক্ষী পদে চাকরিরত জহিরুল ইসলাম ফোন ধ’রেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জ’বাব মেলেনি। বিভাগীয় মা’মলার ত’দন্তকারী
কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় চাকরি পাওয়া এ রকম ঘ’টনায় ৮৮ জনের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ ওঠে। তাঁদের মধ্যে অনেকের কাগজপত্র ও ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়। তবে এই কা’রার’ক্ষীসহ মূল ঠিকানায় এ রকম তিনজনকে পাওয়া গেছে। চাকরি করছেন একজন এবং একই নামে মূল ঠিকানায় পাওয়া গেছে
আরেকজনকে। যাঁদের মূল ঠিকানায় পাওয়া গেছে, তাঁরাও নিজেদের সঠিক বলে দাবি করছেন। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, এটা ত’দন্ত হবে। চে’য়ারম্যা’ন সনদ, পু’লিশ ভেরিফিকেশন—সব ত’দন্তের পর সিদ্ধান্ত হবে। তবে এটা একটি জ’টিল প্র’ক্রিয়া। ত’দন্ত চলছে। যেকোনো সি’দ্ধান্ত হতে সময় লাগবে। তদন্তে কী হবে বলা মু’শকি’ল? প্রসঙ্গত, একজনের হয়ে আরেকজন চাকরি
করার নজির আরও আছে। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মঈন উদ্দিন খান ২০০১ সালে কা’রার’ক্ষী পদে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি উত্তীর্ণও হন। কিন্তু চা’করি হয়নি ধরে নিয়ে কিছুদিন পর তিনি ওষুধের ব্যবসা শুরু
করেন। এর ২০ বছর পর একটি চিঠি পান শাহজাহানপুর ইউপির চে’য়ারম্যা’ন। সেই চিঠিতে জানানো হলো, মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন সিলেট কা’রাগা’রে। এরপর জানা গেল, মঈন উদ্দিন গ্রামে ও’ষুধের ব্যবসা করলেও তাঁর নাম–পরিচয়ে চাকরি
করছেন অন্যজন। এ নিয়ে গত বছরের ২১ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘কা’রার’ক্ষীর চাকরি পেয়েছেন মঈন, ২০ বছর ধ’রে করছেন অন্যজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।